আরবি নববর্ষ আর ইসলামী ক্যালেন্ডারের সূচনা! নববর্ষে আমাদের করণীয়
আরবি নববর্ষ ইসলামী নতুন বছরের সূচনা! হিজরতের ইতিহাস আর মহররম এবং আশুরার তাৎপর্য সহ মুসলিম জীবনে এর গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পড়ুন আজকের এই প্রতিবেদনটি📍
আরবি নববর্ষ বা হিজরি নববর্ষ বা ইসলামি নববর্ষ এই তিনটি কথাই হলো ইসলামি ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন! যা মহররম মাসের শুরুতে পালিত হয়। মুসলিম সমাজে এই দিনটি অত্যন্ত পবিত্র আর অনো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ📍
আজকের এই ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে হিজরি ক্যালেন্ডারের ইতিহাস? নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর হিজরতের তাৎপর্য? মহররম মাসের গুরুত্ব? পবিত্র আশুরার ঘটনা এবং হিজরি নববর্ষে করণীয় বিষয়াবলি নিয়ে📍আরো আলোচনা করা হয়েছে হিজরি ক্যালেন্ডারের ১২টি মাস সম্পর্কে এবং ইসলামে এই দিনটির গুরুত্ব আর ইসলামের শিক্ষা ও আধুনিক যুগে মুসলমানদের করণীয়📍
ইসলামি ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন প্রজন্ম যেনো হিজরি নববর্ষের প্রকৃত উদ্দেশ্য আর প্রকৃত তাৎপর্য বুঝে সেই লক্ষ্যেই আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনটি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে📍
মুসলিমদের আত্মশুদ্ধি আর ইবাদত এবং ত্যাগের শিক্ষা গ্রহণের অন্যতম সময় এটি! যারা ইসলামি ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে জানতে চান? তাদের জন্য আজকের এই প্রতিবেদনটি হতে পারে একটি দিকনির্দেশনামূলক সংকলন📍
আরবি নববর্ষ কী?
আরবি নববর্ষ বা হিজরি নববর্ষ হলো ইসলামি চন্দ্র বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস অর্থাৎ মহররমের ১ তারিখ।এটি হিজরি বর্ষের সূচনা। এই দিনটি মুসলিম বিশ্বে গভীর ভাবগম্ভীরতার সঙ্গে পালিত হয়। হিজরি নববর্ষ মূলত: আমাদের সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত অর্থাৎ স্থানান্তরের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে উদযাপিত হয়।
হিজরি ক্যালেন্ডারের ইতিহাস
ইসলামী ক্যালেন্ডারের সূচনা হয় ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রাঃ) এর সময়। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে নবী করিম (সাঃ) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। আর তখন থেকেই হিজরি ক্যালেন্ডারের গণনা শুরু হয়। এটি একটি চাঁদভিত্তিক পঞ্জিকা যেখানে ১২টি মাস রয়েছে।প্রতিটি মাস ২৯ দিন বা ৩০ দিনের হয়ে থাকে।
হিজরি বছরের বারো মাসের নাম
🔵 মহররম🔴 সফর
🔵 রবিউল আউয়াল
🔴 রবিউস সানি
🔵 জমাদিউল আউয়াল
🔴 জমাদিউস সানি
🔵 রজব
🔴 শাবান
🔵 রমজান
🔴 শাওয়াল
🔵 জিলক্বদ
🔴 জিলহজ্জ
আরবি নববর্ষে কী করণীয়?
আরবি নববর্ষ মুসলিম জীবনে আত্মশুদ্ধি আর নতুন করে সত্য সঠিক পথে চলার অঙ্গীকারের সময়।
যেহেতু এটি ইসলামী বর্ষের সূচনা! তাই আমাদের উচিত এই দিনটি উপলক্ষে বেশি বেশি করে আত্মসমালোচনায় মনোনিবেশ করা এবং ভালো কাজের সংকল্প গ্রহণ করা।আরবি নববর্ষে গুরুত্বপূর্ণ করণীয়
ইসলামি নববর্ষের এই দিনে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হলো: বেশি করে নফল রোজা রাখা, নফল নামাজ আদায় করা, দোয়ার মাধ্যমে ইবাদতে মনোযোগী হওয়া এবং অতীতের গুনাহ থেকে তাওবা করা আর ভবিষ্যতে গোনাহ না করার অঙ্গিকার করা। মহররম মাসের ৯ আর ১০ তারিখে রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। হিজরতের ইতিহাস স্মরণ করে আত্মসমালোচনায় মন দেওয়া সবচেয়ে উচিত। হিজরি নববর্ষ আনন্দ বা উৎসবের দিন নয়! বরং আত্মনিয়ন্ত্রণ ও তাকওয়ার মাধ্যমে নতুন জীবন শুরু করার শিক্ষা দেয়। আরবি নববর্ষে সঠিক আমল আর ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই হতে পারে আমাদের প্রধান লক্ষ্য।ইসলামে হিজরি নববর্ষের গুরুত্ব
ইসলামে এই দিনকে আনন্দ আর উৎসবের দিন হিসেবে উদযাপন করা হয় না! বরং এটি আত্মসমালোচনার এবং নতুনভাবে ভালো পথে ফিরে আসার একটি সময় হিসেবে উদযাপন করা হয়। নবী করিম (সাঃ) কখনো হিজরি নববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ উৎসব পালন করেননি! তবে তাঁর হিজরত আমাদের জীবনের জন্য অনন্য একটি শিক্ষা।আশুরা আর মহররমের তাৎপর্য
মহররম মাস হলো ইসলামী ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস এবং এই মাসটি হলে চারটি পবিত্র মাসের অন্যতম একটি। এই মাসের ১০ তারিখ সবার মধ্যে পবিত্র আশুরা নামে পরিচিত। যা মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে নবী হযরত মুসা (আঃ) আর তাঁর অনুসারীরা ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পান! আর রাসুল (সাঃ) এই দিন রোজা রাখতেন। একইসাথে: কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (রাঃ) আর তাঁর পরিবারগণ শাহাদত বরণ করেন। এই বিষয়গুলোর পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়: পবিত্র আশুরা শিক্ষা দেয় আত্মত্যাগ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান, ধর্য্যের সর্বচ্চতা, সত্যের পথে অটল থাকা ইত্যাদি। মহররম মাসে নফল রোজা, নফল নামাজ, নফল ইবাদত আর আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করেন।এই মাসের তাৎপর্য, ইতিহাস, ইমান, ত্যাগের এক অনন্য স্মারক হয়ে রয়েছে মুসলিমদের জন্য।
চাঁদের হিসাবেই হিজরি নববর্ষ
আরবি মাসের শুরু চাঁদের উদয় দেখার মাধ্যমে গণনা করা হয়। তাই বিভিন্ন দেশে একদিন আগে বা পরে হিজরি নববর্ষ পালিত হয়। এটি ইসলামি ঐক্য এবং চন্দ্র মাসভিত্তিক সময়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।আধুনিক প্রেক্ষাপটে হিজরি নববর্ষ
আজকের আধুনিক সময়ে আমরা যতই গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি না কেন! মুসলিম সমাজে হিজরি ক্যালেন্ডারের গুরুত্ব কিন্তু অপরিসীম। রোজা, হজ্জ, ঈদ, আশুরা ইত্যাদি সবই কিন্তু এই ক্যালেন্ডার অনুসারে পালিত হয়। তাই আমাদের সমাজের নতুন প্রজন্মকে এই ইতিহাস আর মূল্যবোধ জানানো আমাদের কর্তব্য📍👉 আরবি নববর্ষ হলো আত্মশুদ্ধি আর নতুনভাবে সৎপথে চলার প্রতিজ্ঞা করার সময় ✊
শুধু তারিখ পাল্টানো নয়! বরং আমাদের সবার জীবনের দিক পরিবর্তনের একটি সুযোগ
আর তাই চলুন!
👉 আমরা সবাই এই নতুন বছরটিকে ইসলামী মূল্যবোধে উদ্ভাসিত করে তুলি📍
কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি ওয়েবসাইট
FAQ হিজরি নববর্ষ সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
হিজরি নববর্ষ কবে শুরু হয়?
হিজরি নববর্ষ শুরু হয় মহররম মাসের প্রথম দিন, যা চাঁদের অবস্থানের উপর নির্ভর করে।
হিজরি নববর্ষে মুসলিমদের করণীয় কী?
এই দিনে নফল রোজা রাখা, ইবাদত করা, দোয়া ও তওবা করা অন্যতম করণীয়।
আশুরা দিনটির গুরুত্ব কী?
আশুরা হলো মহররম মাসের ১০ তারিখ, যেদিন ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালায় শহীদ হন।
হিজরি ক্যালেন্ডার ও ইংরেজি ক্যালেন্ডারের পার্থক্য কী?
হিজরি ক্যালেন্ডার চাঁদভিত্তিক, আর ইংরেজি বা গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার সৌরভিত্তিক।
হিজরি নববর্ষ কি আনন্দ উদযাপনের দিন?
না, এটি আত্মসমালোচনা ও ইবাদতের দিন, কোনো উৎসব পালনের নয়।
না, এটি আত্মসমালোচনা ও ইবাদতের দিন, কোনো উৎসব পালনের নয়।