হজ্জের নিয়ম: ধাপে ধাপে পরিপূর্ণ হজ্জ আদায় করার সঠিক বাংলা গাইডলাইন
হজ্জ 🕋 ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। আজকের এই ব্লগে আপনি জানতে পারবেন: হজ্জের নিয়ম, হজ্জের ধাপসমূহ, হজ্জের ফরজ, হজ্জের ওয়াজিব, হজ্জের সুন্নত ও হজ্জের করণীয় বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত এবং হজ্জে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি, হজ্জের ইহরাম বাঁধা থেকে শুরু করে কাবা শরীফ তাওয়াফ ও জমরায় পাথর নিক্ষেপ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ এখানে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যারা জীবনে প্রথমবার হজ্জে যাচ্ছেন! তাদের জন্য আজকের এই ব্লগ গাইড অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে ✔
আরো পড়ুন ➤
🕋 হজ্জ কী?
হজ্জ 🕋 ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যা শারীরিক এবং মানসিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য জীবনে একবার ফরজ। হজ্জ কেবল একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়। হজ্জ হলো আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ইসলামের অন্যতম সেরা একটি মাধ্যম।
হজ্জ পালন করা হয় হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৮ থেকে ১২ জিলহজ্জ তারিখ পর্যন্ত > নির্দিষ্ট স্থান ও নিয়ম মেনে। মুসলিমরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে সবাই একত্রিতভাবে সমবেত হয়ে এই মহান ইবাদত সম্পন্ন করেন।
হজ্জে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু রুকন।
যেমন: ইহরাম বাঁধা, কাবা শরীফ তাওয়াফ, সাফা মারওয়া সাই, আরাফাতে অবস্থান, মুজদালিফা, কুরবানি ও জামারাতে রমি।
হজ্জ মানুষকে ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ধৈর্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায়। হজ্জ হলো মুসলিমদের জন্য একটি জীবন বদলে দেওয়া অভিজ্ঞতা। যা পাপ মোচনের বড় বিশাল একটা সুযোগ।
🕋 হজ্জের প্রকারভেদ
হজ্জ মূলত তিনটি প্রকারে বিভক্ত রয়েছে।
প্রতিটি প্রকারে কিছু পার্থক্য থাকলেও লক্ষ্য একটাই: শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও ইসলামের ফরজ কাজ আদায় করা।
নিচে হজ্জের তিনটি প্রকার ও হজ্জের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো 👇
১/ হজ্জ ইফরাদ ➤ Hajj Ifrad
এই হজ্জে শুধুমাত্র হজ্জের নিয়ত করা হয়। উমরা করা হয় না। এটি মূলত মক্কা শহরের বাইরের মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য। ইহরাম বাঁধার পর কেবল হজ্জের রুকনগুলো আদায় করতে হয়। কুরবানি করা ওয়াজিব নয়।
✅ উপযুক্ত হলো তাদের জন্য:
যারা শুধু হজ্জ করতে চান।
২/ হজ্জ কিরান ➤ Hajj Qiran
এই প্রকারে হজ্জ ও উমরার নিয়ত একসাথে করা হয় এবং উভয়টি একই ইহরামে পালন করতে হয়। এই হজ্জ সবচেয়ে কঠিন ধরণের হজ্জ এবং এই হজ্জে কুরবানি করা ওয়াজিব।
✅ উপযুক্ত হলো তাদের জন্য:
যারা অভিজ্ঞ ও ধৈর্যশীল।
৩/ হজ্জ তামাত্তু ➤ Hajj Tamattu
এই হজ্জে প্রথমে উমরা করে ইহরাম খোলা হয়। পরে আবার হজ্জের জন্য নতুন ইহরাম বাঁধা হয়। এই হজ্জ সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সবচেয়ে সহজ হজ্জ। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক হাজিরা এই হজ্জ করেন।
✅ উপযুক্ত হলো তাদের জন্য:
যারা এক সফরে উমরা ও হজ্জ উভয় হজ্জ পালন করতে চান।
🕋 হজ্জ পালনের ধাপসমূহ ➤ Step by Step Guide
হজ্জ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ এবং প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য জীবনে একবার করা হলো ফরজ। হজ্জের প্রতিটি ধাপের রয়েছে নির্দিষ্ট সময় এবং স্থান ও নিয়ম। তাই এই ইবাদত পালনের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি এবং জ্ঞান ও ধৈর্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ধাপ ১: ইহরাম বাঁধা (Entering the State of Ihram)
ইহরাম হলো হজ্জ শুরু করার পূর্বের বিশেষ প্রস্তুতি। যা হজ্জের জন্য মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করার প্রতীক।
করণীয়:
গোসল করে পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা। পুরুষরা দুই খণ্ড সাদা কাপড় পরিধান করতে হবে। যেমন: একটি কোমরে আর অন্যটি গায়ে পরিধান করেন।
আর নারীরা সাধারণত পর্দাশীল পোশাকেই ইহরাম করেন।
মনে রাখবেন ➤
সুগন্ধি বা পারফিউম ব্যবহার করা যাবে না আর দুই রাকাত ইহরামের নামাজ পড়তে হবে ✔
হজ্জ বা উমরার নিয়ত করে বলা ➤
লাব্বাইক আল্লাহুম্মা হজ্জান অথবা লাব্বাইক আল্লাহুম্মা উমরাতান
এরপর তালবিয়া পাঠ করতে থাকবেন ➤
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالمُلْكَ، لا شَرِيكَ لَكَ
মনে রাখতে হবে:
ইহরামে থাকা অবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক, ঝগড়া, চুল অথবা নখ কাটা, পশু শিকার, রক্তপাত করা কিন্তু নিষিদ্ধ। এগুলো করা যাবে না।
ধাপ ২: মক্কা প্রবেশ ও কাবা শরীফে আগমন
মক্কা নগরীতে প্রবেশ করার সময়: দোয়া ও বিনয় সহকারে প্রবেশ করুন। কাবা শরীফ প্রথম দর্শনের সময় দোয়া কবুল হওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা কিন্তু বেশি থাকে। তাই > আল্লাহর কাছে বেশি বেশি মাফ চাইতে থাকবেন।
ধাপ ৩: তাওয়াফ ➤ Tawaf
তাওয়াফ হলো: পবিত্র কাবা শরীফকে কেন্দ্র করে ৭ বার চক্কর দেওয়া বা ৭ বার ঘোরা।
করণীয়:
হাজরে আসওয়াদ এর কাছে এসে তাওয়াফ শুরু করবেন। প্রতি চক্করে দোয়া ও দরুদ আর ইবাদত করবেন। পুরুষদের জন্য প্রথম তিন চক্করে দ্রুত হাঁটা (রমল) সুন্নত। সাতবার চক্কর শেষে দুই রাকাত নামাজ পড়া মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে।
ধাপ ৪: সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সাঈ ➤ Sai
সাঈ হলো কাবা শরীফের পাশে অবস্থিত সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার যাতায়াত করা।
করণীয়:
সাফা পাহাড়ে উঠে দোয়া করে যাত্রা শুরু করুন। সাফা থেকে মারওয়া তারপর মারওয়া থেকে সাফা এভাবে করে ৭ বার যাতায়াত করা।
পুরুষরা নির্দিষ্ট সবুজ বাতির মাঝখানে দৌড়াবে।
যেটাকে বলে: হরওয়ালা
ধাপ ৫: মিনায় যাত্রা ➤ ৮ জিলহজ্জ ➤ ইয়াওমুত তরওইয়া
করণীয়:
মিনায় পৌঁছে: যোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজ পড়া। রাতে মিনাতে অবস্থান করতে হবে। বেশি বেশি ইবাদত এবং কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়া করবেন।
ধাপ ৬: আরাফাতের ময়দানে যাওয়া ➤ ৯ জিলহজ্জ
এই দিনটি হজ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশের দিন।
করণীয়:
সকাল থেকে আরাফাতের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। দুপুরে খুতবা শুনতে হবে ও যোহর আর আসর একসাথে আদায় করতে হবে। সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করতে হবে।
হাদীস: হজ্জ হলো আরাফা। (সহিহ তিরমিযি)
এই দিনে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে দোয়া, ইস্তেগফার, চোখের জল ফেলে কেঁদে কেঁদে সবকিছু চাওয়া দিন এটি।
সবচেয়ে বরকতময় সময় হলো এই আরাফার দিন।
ধাপ ৭: মুজদালিফায় রাত যাপন
করণীয়:
সূর্যাস্তের পর আরাফা থেকে মুজদালিফায় যাওয়া।মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে পড়ে রাতে বিশ্রাম করা। তারপর কঙ্কর সংগ্রহ করা। ৭০টি ছোট পাথর সংগ্রহ করতে হবে জামারাতে রমি করার জন্য।
ধাপ ৮: কুরবানির দিন ➤ ১০ জিলহজ্জ ➤ ইয়াওমুন নাহর
করণীয়:
জামারাতে রমি: বড় শয়তান (জামারাতুল আকাবা) এ ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে।
কুরবানি: হজ্জে তামাত্তু বা হজ্জে কিরান হজ্জে কুরবানি করা ওয়াজিব।
হালক বা কসর: পুরুষরা মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করতে হবে আর নারীরা এক ইঞ্চি পরিমাণ চুল কেটে ফেলতে হবে।
ইহরাম খোলা: এবার সাধারণ পোশাক পরা যাবে।
ধাপ ৯: তাওয়াফে জিয়ারাহ ➤ ১০ থেকে ১২ জিলহজ্জ
এই তাওয়াফটি হজ্জের ফরজ রুকন এবং হজ্জের মূল তাওয়াফ।
করণীয়:
৭ বার তাওয়াফ করে মাকামে ইব্রাহিমে ২ রাকাত নামাজ পড়া। সাঈ পুনরায় করতে হবে যদি আপনি তামাত্তু হজ্জ করেন।
ধাপ ১০: তাশরীক এর দিনসমূহ ➤ ১১, ১২, ১৩ জিলহজ্জ
করণীয়:
প্রতিদিন তিনটি জামারায় (ছোট, মাঝারি, বড়) ৭টি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। মিনাতে অবস্থান করতে হবে। ইবাদত, দোয়া, দুরুদ ইত্যাদি অব্যাহত রাখতে হবে।
কেউ চাইলে ১২ তারিখেই নিজের দেশে ফিরতে পারেন। তবে ১৩ তারিখ পর্যন্ত অবস্থান করলে অনেক বেশি ফজিলত পাবেন।
ধাপ ১১: বিদায়ী তাওয়াফ (Tawaf al-Wida)
করণীয়:
মক্কা ত্যাগ করার আগে কাবা শরীফে শেষবারের মতো ৭ বার তাওয়াফ করতে হবে।
বিদায়ী তাওয়াফ হলো হজ্জের শেষ অংশ এবং বিদায়ী তাওয়াফ ফরজ না হলেও কিন্তু এটি ওয়াজিব।
অতিরিক্ত পরামর্শ:
✅ সবসময় গাইড মেনে বা দলের অন্য সবার নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
✅ প্রচুর পানি পান করুন ও প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত বিশ্রাম নিন।
✅ ইবাদতের প্রতি মনোযোগ দিন এবং আল্লাহর কাছে বেশি করে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
✅ প্রয়োজনীয় ঔষুধ ও কাগজপত্র নিজের সঙ্গে সঙ্গে রাখুন।
হজ্জের ফরজ এবং ওয়াজিব ও সুন্নত সমূহ:
হজ্জের ফরজ নিয়ম সমূহ
১/ ইহরাম বাঁধা ও নিয়ত করা:
হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধা ফরজ। যা মীকাত (নির্ধারিত সীমা) অতিক্রম করার আগেই করতে হয়। ইহরাম মানে শুধু সাদা কাপড় নয়। এটি একটি পবিত্র অবস্থার নাম। ইহরাম অবস্থায় নিয়্যত ও তালবিয়া পাঠ করতে হয়।
যেমন: লাব্বাইক আল্লাহুম্মা হজ্জান
২/ আরাফাতে অবস্থান ➤ ওকুফে আরাফা:
৯ জিলহজ্জ তারিখ যোহরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।
রাসূল (সা.) বলেছেন: الحج عرفة
অর্থাৎ – হজ্জ হলো আরাফা। (সহিহ তিরমিযি)
৩/ তাওয়াফে জিয়ারাহ ➤ তাওয়াফে ইফাযা:
হজ্জের অন্যতম ফরজ কাজ হলো তাওয়াফে জিয়ারাহ। যা কুরবানির পর করতে হয়। এটি কাবা শরীফকে কেন্দ্র করে ৭ বার ঘোরা বা চক্কর দেওয়া। সময়সীমা: ১০ থেকে ১২ জিলহজ্জ (বিশেষ ক্ষেত্রে ১৩ তারিখ পর্যন্ত)
এটি না করলে কিন্তু হজ্জ শুদ্ধ হবে না।
হজ্জের ওয়াজিব নিয়ম সমূহ
হজ্জের ওয়াজিব হলো সাধারণত ৭টি ✔
কিন্তু বিভিন্ন অভিমত রয়েছে!
কারো কারো মতে হজ্জের ওয়াজিব ৭টির বেশি।
বেশির ভাগে প্রচলিত হলো ৭টি এবং এটিই সবাই পালন করে।
১/ মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা:
মীকাত > নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করার আগে ইহরাম না বাঁধলে দম (কুরবানি) দিতে হয়।
২/ মুজদালিফায় রাত যাপন:
আরাফা থেকে ফেরার পর মুজদালিফায় রাত কাটানো সুন্নতে মুআক্কাদা। তবে অধিকাংশ ওলামাদের মতে মুজদালিফায় রাত কাঠানো ওয়াজিব। এখানে মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে পড়তে হয়।
৩/ জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপ (রমি):
১০, ১১, ১২ জিলহজ্জ তারিখে তিনটি শয়তান বা জামারাতে ৭টি করে কঙ্কর বা পাথর মারতে হয়। এতে মোট ৪৯টি বা তার বেশি ৭০টি কঙ্কর লাগে।
৪/ কুরবানি করা:
হজ্জে তামাত্তু ও হজ্জে কিরান হজ্জকারীদের জন্য কুরবানি করা ওয়াজিব। আর কুরবানি না করলে দম দিতে হয়।
৫/ হালক বা কসর:
পুরুষদের মাথা মুণ্ডানো (হালক) বা চুল ছোট করা (কসর) এবং নারীদের ১ ইঞ্চি পরিমাণ চুল কাটা ওয়াজিব।
৬/ মিনাতে রাত যাপন:
১১ ও ১২ জিলহজ্জে মিনাতে রাত কাটানো ওয়াজিব। কেউ যদি ১৩ তারিখেও থাকে সেটা অধিক ফজিলতপূর্ণ কাজ।
৭/ বিদায়ী তাওয়াফ (তাওয়াফুল বিদা):
হজের কাজ শেষ হওয়ার পর মক্কা ত্যাগের আগে কাবা শরীফে ৭ বার তাওয়াফ করতে হয়। এটি ফরজ না হলেও কিন্তু এটি ওয়াজিব।
✅ ওয়াজিব কাজগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে দম (কুরবানি) কিন্তু ফরজ হয়ে যায়। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
হজ্জের সুন্নত নিয়ম সমূহ
হজ্জের সুন্নত পালন করলে হজ্জ পূর্ণাঙ্গ হয় এবং অধিক ফজিলতও লাভ করা যায়। নিচে উল্লেখযোগ্য হজ্জের সুন্নতসমূহ দেওয়া হলো:
১/ প্রথম তিন চক্করে রমল করা:
তাওয়াফ করার সময় প্রথম তিন চক্করে দ্রুত হেঁটে রমল করা পুরুষদের জন্য সুন্নত।
২/ সাফা-মারওয়ায় সাঈ:
তাওয়াফ শেষে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সাতবার যাতায়াত করা (সাঈ) সুন্নত। এতে হজরত হাজেরার ত্যাগের কথা স্মরণ হয়।
৩/ তালবিয়া পাঠ:
ইহরাম বাঁধার পর যতক্ষণ না কঙ্কর মারা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত বারবার তালবিয়া পাঠ করা সুন্নত।
৪/ আরাফার খুতবা শ্রবণ ও দোয়া:
ইমামের খুতবা শোনা এবং আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বেশি বেশি দোয়া ও কান্না করা সুন্নত।
৫/ মিনায় ৫ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করা:
প্রতিটি নামাজ যথাসময়ে জামাতে পড়া এবং কসর করা যেমন: ৪ রাকাতের নামাজ ২ রাকাত পড়া।
৬/ কাবা শরীফ দেখা মাত্র দোয়া করা:
মক্কায় প্রবেশ করে প্রথমবার কাবা শরীফ দেখার সময় দোয়া করা সুন্নত এবং খুব ফজিলতপূর্ণ।
৭/ আরাফা থেকে মুজদালিফায় শান্তভাবে যাত্রা করা:
ধৈর্য ধরে ও বিনয় সহকারে যাত্রা শুরু করা।
সংক্ষেপে মনে রাখার টিপস:
ফরজ ➤ ইহরাম, আরাফা, তাওয়াফে জিয়ারাহ ✔
ওয়াজিব ➤ কুরবানি, কঙ্কর নিক্ষেপ, হালক/কসর, মুজদালিফায় রাত, মিনায় রাত, বিদায়ী তাওয়াফ ✔
সুন্নত ➤ তালবিয়া, সাঈ, খুতবা, দোয়া, জামাতে নামাজ, কাবা দর্শনে দোয়া ✔
হজ্জে যাওয়ার প্রস্তুতি: বিস্তারিত গাইড
হজ্জ এমন এক ইবাদত যা শুধু আর্থিক সচ্ছলতা নয়। বরং মানসিক এবং শারীরিক ও আধ্যাত্মিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হয়। এটি জীবনের একটি বড় পরীক্ষা! যার জন্য সঠিক প্রস্তুতি ও নিয়ম বেশ জরুরি।
নিচে হজ্জে যাওয়ার পূর্বে বিস্তারিত প্রস্তুতির বিবরণ দেওয়া হলো 👇
ধর্মীয় প্রস্তুতি ➤
হজ্জ পালন করার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা। অনেকেই হজ্জের নিয়ম না জানার কারণে অনেক ভুল করে থাকেন।
তাই: হজ্জের ফরজ, হজ্জের ওয়াজিব, হজ্জের সুন্নত সম্পর্কে জেনে নিন।
✅ হজ্জের সময় পড়ার দোয়া ও তালবিয়া মুখস্থ করে রাখতে হবে। যাতে পরবর্তীতে কোনো ভুল না হয় সেজন্য।
✅ হজ্জের বিভিন্ন ধাপ যেমন: ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ, কুরবানি, রমি, আরাফাতে অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে ভালোভাবে অনুশীলন করে রাখতে হবে।
✅ কোনো স্থানীয় মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার বা অনলাইন হজ্জ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করুন। অথবা কোনো আলেম ওলামার কাছ থেকে হজ্জের নিয়ম সম্পর্কে ভালো জেনে ও বুঝে নিন।
হজ্জের শারীরিক প্রস্তুতি
হজের সময় অনেক বেশি হাঁটা চলা হয়। প্রচণ্ড গরম ও ভিড়ের মধ্যে চলাচল করতে হয়।
✅ হজ্জে যাওয়ার আগে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটার ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
✅ আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। ডায়াবেটিস, প্রেসার, উচ্চ রক্তচাপ, হূদরোগ ইত্যাদি চেক করে নিতে হবে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ সঙ্গে রাখবেন।
✅ প্রচুর পানি পান করা ও হালকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
প্রশাসনিক ও আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি
সঠিক ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ডকুমেন্ট ছাড়া হজ্জ করা সম্ভব নয়।
এতে করে নিশ্চিত করতে হবে:
✅ পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়েছে কি না।
✅ হজ ভিসা ও নিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়েছে কি না।
✅ টিকা গ্রহণ: মিনিনজাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, COVID 19 এর টিকা বাধ্যতামূলক।
✅ ডকুমেন্ট কপি: পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ভিসা ইত্যাদি কয়েকটি কপি করে রাখবেন।
প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুতি (Packing List)
হজের সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের একটি চেকলিস্ট তৈরি করবেন:
✅ দুই টুকরা সাদা কাপড় অর্থাৎ ইহরামের কাপড় (পুরুষদের জন্য)
✅ নারীদের হালকা ও আরামদায়ক পোশাক
(সাদা ও কালো পোশাক বেশি প্রযোজ্য)
✅ আরামদায়ক স্যান্ডেল বা স্লিপার
✅ ছাতা, সানগ্লাস, মাস্ক
✅ পানির বোতল ও ছোট একটি চার্জার ফ্যান
✅ মেডিকেল কিট
(ব্যথানাশক, স্যালাইন, ব্যান্ডেজ, লিপবাম, সানস্ক্রিন)
✅ মোবাইলের চার্জার ও পাওয়ার ব্যাংক
✅ কিবলা নির্ধারক করা অ্যাপ ও প্রয়োজনীয় দোয়া সমূহের বই
✅ পরিচয়পত্র সম্বলিত ব্যাজ
✅ হালকা ব্যাগ এবং নোটবুক ডায়েরি ও কলম
মানসিক প্রস্তুতি
হজ্জে গেলে মানুষের ভিড়, কষ্ট, লাইন, গরম সব কিছুই সহ্য করতে হবে। তাই মানসিকভাবে বেশ প্রস্তুত থাকতে হবে:
✅ ধৈর্য ও সহনশীলতার চর্চা করুন বেশি বেশি
✅ অন্যের ভুলকে ক্ষমা করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে
✅ অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে শিখতে হবে
অতিরিক্ত টিপস
✅ প্রয়োজনে মোবাইলে হজ্জের সকল দোয়া ও নিয়মাবলি সেভ করুন
✅ আপনার পরিবার ও কাছের লোকদের কাছে দোয়া চেয়ে নিন
✅ ব্যাংক ট্র্যাভেল কার্ড বা পর্যাপ্ত অর্থ নিশ্চিত করুন
✅ হজ্জের গ্রুপ লিডারের নম্বর ও হোটেলের ঠিকানা লিখে রাখুন
সঠিক হজ্জের জন্য সহায়ক অ্যাপস এবং ওয়েবসাইটের লিংকসমূহ 👇
নুসুক হজ্জ ওয়েবসাইট
বাংলাদেশ হজ মিশন ওয়েবসাইট
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
হজ্জ গাইড বই
ডেইলি ইসলাম
লাব্বাইক হজ্জ অ্যাপস
📢 হজ্জ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় রীতি নয়। হজ্জ হলো আত্মশুদ্ধির একটি মহান উপলক্ষ। হজ্জের প্রতিটি ধাপেই রয়েছে আধ্যাত্মিক বার্তা ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশাল বড় বড় সুযোগ। হজ্জে যাওয়ার আগে হজ্জের নিয়ম কানুন ও হজ্জের প্রস্তুতি সম্পর্কে ভালোভাবে বিস্তারিত জানা প্রত্যেক হজ্জ যাত্রীদের জন্য আবশ্যক বা বাধ্যতামূলক।
আশা করি এই ব্লগ গাইডটি আপনাকে হজ্জ সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিস্তারিত বিশ্লেষণ সহকারে হজ্জের ধারণা দিয়েছে।
আরো পড়ুন ➤
FAQ সঠিকভাবে হজ্জ পালনের জন্য প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর:
হজ্জ কি সকল মুসলমানদের জন্য ফরজ?
হজ্জ শুধুমাত্র তাদের জন্য ফরজ: যারা শারীরিকভাবে ও আর্থিকভাবে একেবারে সক্ষম এবং পবিত্র মক্কা শহরে পৌঁছানোর নিরাপদ পথ রয়েছে। এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি এবং জীবনে একবার হজ্জ আদায় করাই যথেষ্ট। যাদের ওপর হজ্জ ফরজ > তারা যদি হজ্জ পালন না করে।
তাহলে তারা ইসলামের মূল ভিত্তির একটিকে পরিহার করলেন এবং তারা অনেক বড় গোনাহের ভার কাঁদে তুলে নিলেন।
নারী ও পুরুষরা কি একা একা হজ্জ করতে পারেন?
পুরুষরা একা একা হজ্জ করতে পারলেও নারীদের জন্য মাহরাম: স্বামী বা এমন পুরুষ আত্মীয় যাকে বিয়ে করা হারাম! এরকম ছাড়া হজ্জে যাওয়া ইসলামী শরীয়তে নিরুৎসাহিত। অধিকাংশ আলেমের মতে: মাহরাম ছাড়া নারীর হজ্জে যাওয়া একেবারেই বৈধ নয়। তবে: কিছু কিছু মত অনুসারে নির্ভরযোগ্য নারী দলের সঙ্গে গেলে অনুমতি দেওয়া হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকলে একা হজ্জ করা জায়েজ আছে।
হজ্জ ও উমরার মধ্যে পার্থক্য কী?
হজ্জ ও উমরা দুটিই পবিত্র ইবাদত। তবে: হজ্জ নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট স্থানে পালন করা ফরজ ইবাদত। যা: বছরে একবার জিলহজ্জ মাসে ঈদ উল আজহা বা কুরবানীর ঈদের সময় আদায় করা হয়। অন্যদিকে: উমরা হজ্জ সারা বছর যেকোনো সময় করা যায় এবং এটি ফরজ নয়। বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত।
হজ্জের প্রস্তুতির জন্য কী করা উচিত?
হজ্জের প্রস্তুতির জন্য সর্বপ্রথম ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা সবচেয়ে জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ। ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও হজ্জের দোয়া শেখা উচিত। এরপর শারীরিকভাবে প্রস্তুত হতে প্রতিদিন হাঁটা ও শারীরিক ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পাসপোর্ট, ভিসা, টিকা কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সমূহ দেখে বুঝে প্রস্তুত রাখতে হবে। ইহরামের কাপড়, আরামদায়ক কাপড়, ওষুধ, ছাতা, স্যান্ডেল, হালকা ব্যাগ সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করতে হবে। মানসিকভাবে ধৈর্য এবং সহনশীলতা ও আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এই কাজগুলো করাই হজ্জের প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজন।
হজ্জে গিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কোনটি?
হজ্জে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো: আরাফাতের ময়দানে অবস্থান (ওকূফে আরাফা) ৯ই জিলহজ তারিখে আরাফাতের মাঠে দুপুর বেলা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা হজ্জের মূল রুকন।
রাসূল (সা.) বলেছেন: হজ্জ হলো আরাফা
হাদিস ➤ সহীহ তিরমিজি
যদি কেউ এই দিনে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত না হয়। তাহলে তার হজ্জ করা সহীহ শুদ্ধ হয় না।