জেনে নিন বেনজামিন নেতানিয়াহুর জীবনী আর ইতিহাস কেমন

জেনে নিন বেনজামিন নেতানিয়াহুর জীবনী আর ইতিহাস কেমন


আলোচিত আর সমালোচিত বেনজামিন নেতানিয়াহুকে কিছু কথা জেনে নিন

বেনজামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী! যিনি তার কঠোর নিরাপত্তা নীতি! আন্তর্জাতিক কূটনীতি! বিতর্কিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত!

বেনজামিন নেতানিয়াহু যিনি প্রায়শই BB নামে পরিচিত! ইসরায়েলের রাজনীতিতে একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব আর মুসলিম বিশ্বের কাছে বা মুসলমানদের কাছে ঘৃনার পাত্র হিসেবে ব্যাপক পরিচিত! ইসরায়েলের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নেতৃত্বে ইসরায়েল নিরাপত্তা নীতি আর অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবেঃ নেতানিয়াহু বহুবার বিতর্ক আর সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন আর মুসলিম বিশ্বের কাছে আজীবন ঘৃনার পাত্র হিসেবে থাকবে।

আমাদের আজকের প্রতিবেদনে বেনজামিন নেতানিয়াহুর জীবন কাহিনী! নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক পথচলার ইতিহাস! নেতানিয়াহুর সাফল্যের ইতিহাস! নেতানিয়াহুর সমালোচনার কারন! নেতানিয়াহুর ভালো দিক! নেতানিয়াহুর খারপ দিক! নেতানিয়াহুর ভবিষ্যত সম্ভাবনা ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা📍


নেতানিয়াহুর পরিচয় আর প্রাথমিক জীবন

বেনজামিন নেতানিয়াহু জনপ্রিয়ভাবে BB নামে পরিচিত! ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী আর তিনি ২১ অক্টোবর ১৯৪৯ সালে তেল আবিবে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা বেনজিওন নেতানিয়াহু ছিলেন একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ এবং মা ছিলো তিজহা সেগাল। শৈশবের একটি বড় অংশ তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কাটান যেখানেঃ শিক্ষা আর সংস্কৃতির প্রভাব তার ব্যক্তিত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে তিনি বিশেষ বাহিনীর সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন যা পরবর্তীতে তার রাজনৈতিক চিন্তাধারায় প্রভাব ফেলেছে।



নেতানিয়াহুর শিক্ষা জীবনের ইতিহাস

বেনজামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে উঠেন আর সেখানেই উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি MIT থেকে স্থাপত্য আর ব্যবসা প্রশাসনে ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। শিক্ষা জীবনে অর্থনীতি, রাজনীতি, নেতৃত্বে তার দক্ষতা ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়।



নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত জীবনের ইতিহাস

বেনজামিন নেতানিয়াহু তিনবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন! তার বর্তমান স্ত্রী সারা নেতানিয়াহু একজন মনোবিজ্ঞানী এবং তারা দুই পুত্রের জনক জননী! নেতানিয়াহুর পারিবারিক জীবন প্রায়ই ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে আলোচনায় আসে বিশেষ করেঃ রাজনৈতিক আর সামাজিক প্রসঙ্গে। তিনি ইংরেজি আর হিব্রুতে সাবলীল এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার ব্যক্তিগত উপস্থিতি বা কূটনৈতিক যোগাযোগ দক্ষতা তাকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে। পরিবার আর ব্যক্তিগত সম্পর্কের পাশাপাশিঃ তিনি রাজনৈতিক জীবনে সমানভাবে সক্রিয় থেকেছেন।



নেতানিয়াহুর সামরিক জীবনের ইতিহাস

বেনজামিন নেতানিয়াহু ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের বিশেষ বাহিনী Sayeret Matkal এর মধ্যে যোগ দেন। তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অভিযানে অংশ নেন যার মধ্যে সন্ত্রাস দমন ও জিম্মি উদ্ধার মিশন উল্লেখযোগ্য। ১৯৭২ সালে আহত হয়ে সামরিক জীবন শেষ করে ফেলেন তবেঃ এই অভিজ্ঞতা তার নিরাপত্তা আর প্রতিরক্ষা নীতিকে আরো অনেক বেশি গভীরভাবে প্রভাবিত করে।



নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস

বেনজামিন নেতানিয়াহু ১৯৮০ এর দশকে জাতিসংঘে ইসরায়েলের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে কূটনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন যা ইসরায়েলের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তন ছিলো। পরবর্তীতে ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন আর ২০২২ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসেন। তার রাজনৈতিক নীতি মূলতঃ নিরাপত্তা জোরদার বা অর্থনৈতিক সংস্কার বা প্রযুক্তি খাতে অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের উপর কেন্দ্রীভূত ছিলো।



নেতানিয়াহুর প্রধান সাফল্য কী কী?

বেনজামিন নেতানিয়াহুর প্রধান সাফল্যের মধ্যে রয়েছেঃ আব্রাহাম চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে আরব বিশ্বের কয়েকটি দেশের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ আর ইসরায়েলের প্রযুক্তি বা প্রতিরক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, অর্থনৈতিক উদারনীতি বাস্তবায়ন, সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার। তার নেতৃত্বে সন্ত্রাস দমন কার্যক্রম শক্তিশালী হয়েছে আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলের কূটনৈতিক অবস্থান আরো অনেক দৃঢ় হয়েছে। এছাড়াঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক উন্নয়নে তার অনেক বড় অর্জনের একটি সাফল্য।



নেতানিয়াহুকে নিয়ে সমালোচনার কারণ কী কী?

বেনজামিন নেতানিয়াহুকে ঘিরে সমালোচনার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি, ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ইত্যাদি যা নিয়ে তিনি একাধিকবার তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন। ফিলিস্তিন নীতি ও বসতি স্থাপন কর্মসূচি আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। এছাড়াঃ বিচার বিভাগ সংস্কারের প্রস্তাব দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলন সৃষ্টি করেছে। তার রাজনৈতিক কৌশল অনেক সময় বিভাজনমূলক হিসেবে দেখা হয় যা ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।



নেতানিয়াহুকে নিয়ে মুসলিম বিশ্বের সমালোচনার কারন কী কী আর কেন সমালোচিত?

বেনজামিন নেতানিয়াহুর ফিলিস্তিনি ইস্যুতে কঠোর অবস্থান এবং পশ্চিম তীর আর গাজায় বসতি সম্প্রসারণ মুসলিম বিশ্বের প্রধান সমালোচনার কারণ। তিনি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করেন যা অনেক মুসলিম দেশ ও জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। এছাড়াঃ তার সরকারী নীতিতে ধর্মীয় ও ভূরাজনৈতিক সংঘাত তীব্র হয় যা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে হুমকি দেয় বলে মুসলিম বিশ্বের একাংশ মানুষ মনে করেন। এই কারণেই নেতানিয়াহুকে মুসলিম বিশ্ব ব্যাপক সমালোচনা আর ঘৃণা করে থাকে।



নেতানিয়াহুকে নিয়ে ভালো দিক?

বেনজামিন নেতানিয়াহু একজন দক্ষ কূটনীতিক আর কঠোর নিরাপত্তা নীতির নেতা। তার নেতৃত্বে ইসরায়েলের অর্থনীতি আর প্রযুক্তি খাত উল্লেখযোগ্য উন্নতি লাভ করেছে। তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইসরায়েলের অবস্থানকে আরো অনেক বেশি শক্তিশালী করেছেন এবং আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির নতুন দিক উন্মোচন করেছেন।



নেতানিয়াহুকে নিয়ে খারাপ দিক?

বেনজামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে যা তার জনপ্রিয়তা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তার ফিলিস্তিনি নীতি আর বসতি সম্প্রসারণ বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে পড়েছে। এছাড়াঃ তার নেতৃত্বে রাজনৈতিক আর সামাজিক বিভাজন বেড়েছে যা ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ ঐক্যকে ব্যাপকভাবে দুর্বল করেছে।



নেতানিয়াহুকে নিয়ে ভবিষ্যত সম্ভাবনা কী কী?

বেনজামিন নেতানিয়াহুর ভবিষ্যত রাজনৈতিক সম্ভাবনা এখনো শক্তিশালী বিশেষ করেঃ ইসরায়েলের ডানপন্থী আর নিরাপত্তা কেন্দ্রিক শিবিরে। তিনি পার্টির ভিতরে এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী থাকবেন। তবেঃ দুর্নীতি অভিযোগ ও সামাজিক বিরোধ তার রাজনৈতিক জীবনকে কঠিন করতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় তার ভূমিকা সীমিত কিন্তু কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেন। নতুন রাজনৈতিক জোট আর পরিবর্তিত পরিস্থিতি তার ক্ষমতা ও প্রভাবকে প্রভাবিত করতে পারে।



বেনজামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলের রাজনীতিতে এক প্রভাবশালী বা বিতর্কিত আর মুসলিম বিশ্ব বা মুসলমানদের কাছে ঘৃণাত্বক নেতা। একদিকে যেমনঃ তার কঠোর নিরাপত্তা নীতি, কূটনৈতিক কৌশল, রাজনৈতিক কৌশল তাকে অনন্য করেছে। আবার অন্যদিকেঃ তাকে অবৈধ কার্যকলাপের কারণে অন্যান্ন দেশের নেতাদের কাছে বা বিশেষ করেঃ মুসলিম বিশ্বের কাছে অনেক বেশি সমালোচনার পাত্র হিসেবে তৈরি করেছে। তবেঃ ভবিষ্যতে তার নেতৃত্ব ইসরায়েল আর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post