বর্তমান বিশ্বে জ্ঞান অর্জন আর সীমাবদ্ধ নেই কেবল শ্রেণিকক্ষ বা বইয়ের মধ্যে। ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন ঘরে বসেই বিশ্বমানের শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব। ঠিক এমন সময়েই বিশ্বব্যাংক চালু করেছে তিনটি নতুন বিনামূল্যের অনলাইন কোর্স যা পরিবেশ আর প্রযুক্তি আর টেকসই উন্নয়নকে সামনে রেখে সাজানো হয়েছে। সেই কোর্সে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থী কিংবা গবেষক কিংবা নীতি নির্ধারক কিংবা সাধারণ মানুষ নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবেন বিশেষ করেঃ বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশে সেই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের ভবিষ্যত উন্নয়নে অনেক বেশি ভূমিকা রাখবে। বিশ্বমানের জ্ঞানকে সহজভাবে গ্রহণের সুযোগ নিঃসন্দেহে সবার জন্য বিশেষ অনন্য সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হবে।
বিশ্বব্যাংকের বিনামূল্যের তিনটি কোর্সের মূল বৈশিষ্ট্য কেমন আর কী কী?
বিশ্বব্যাংক যে তিনটি বিনামূল্যের অনলাইন কোর্স চালু করেছে তার মূল বৈশিষ্ট্য হলোঃ সহজলভ্যতা আর আধুনিক কনটেন্ট বা বিশ্বমানের শিক্ষা পদ্ধতি। প্রতিটি কোর্সই Self Paced অর্থাৎ শিক্ষার্থী নিজের সুবিধামতো সময় নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন যা ব্যস্ত পেশাজীবী থেকে শিক্ষার্থী ইত্যাদি সবার জন্যই অনেক বেশি উপযোগী ব্যবস্থা হবে।
মূল বৈশিষ্ট্য নিচে উপস্থাপন করা হলো
বিনামূল্যে শেখার সুযোগ কোর্স কনটেন্ট আর লেকচার সম্পূর্ণ ফ্রি যা আর্থিকভাবে অনেকের জন্য বড় সহায়ক হবে। সেলফ পেসড শেখার সুযোগ সময়ের চাপ নেই আর সপ্তাহভিত্তিক মডিউল থাকবে যাতে যে কেউ নিজের মতো করে শেষ করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক মানের কনটেন্ট পরিবেশ, টেকসই উন্নয়ন, ব্লো ইকোনমি, উদ্ভাবনী প্রযুক্তি নিয়ে তৈরি যা সরাসরি গ্লোবাল চ্যালেন্জের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইন্টারেক্টিভ শেখার পদ্ধতি লেকচার, কেস স্টাডি, কুইজ, গ্রুপ আলোচনা অন্তর্ভুক্ত থাকায় শিক্ষার্থীরা কেবল তাত্ত্বিক জ্ঞান নয় বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। সার্টিফিকেটের সুযোগ কোর্স সম্পন্ন করার পর সার্টিফিকেট আদায় করা যাবে যা ভবিষ্যতে ক্যারিয়ারে মূল্য যোগ করবে। গ্লোবাল পজিশন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ থাকবে যা নতুন আইডিয়া আর সহযোগিতার পথকে খুলে দেয়।
সার্বিকভাবে দেখা যায়ঃ বিশ্বব্যাংকের কোর্সের বৈশিষ্ট্য কেবল শেখার সুযোগে সীমাবদ্ধ নয় শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা অর্জন আর পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাশাপাশিঃ ক্যারিয়ার উন্নয়ন করার জন্য অনেক বেশি কার্যকর।
বিশ্বব্যাংকের বিনামূল্যের তিনটি কোর্স কেন মূল্যবান আর কি কি কাজে লাগবে?
বিশ্বব্যাংকের তিনটি ফ্রী অনলাইন কোর্সের সবচেয়ে বড় মূল্য হলোঃ বিশ্বমানের জ্ঞানকে সহজলভ্য করে তুলা যা সাধারণতঃ পরিবেশ বা টেকসই উন্নয়ন বা নীতি নির্ধারণ সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক মানের কোর্সে অংশ নিতে উচ্চ খরচ লাগে কিন্তু এখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শেখার সুযোগ করা হয়েছে ফলেঃ শিক্ষার্থী, গবেষক, চাকরিজীবী, সাধারণ আগ্রহী সবাই সহজেই অংশ নিতে পারেন। এই কোর্স মূলত জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা পরিবেশ সংরক্ষণ কিংবা গ্রিন টেকনোলজি আর উদ্ভাবনী উন্নয়ন কৌশল শেখায় যা বর্তমান বিশ্বে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তা নিয়ে গবেষণা আর পড়াশোনায় কাজে লাগাতে পারবেন। পেশাজীবীরা নীতি প্রণয়ন আর প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা বাড়াতে পারবেন। উদ্যোক্তারা নতুন ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় গ্রিন আর ব্লু ইকোনমির ধারণা প্রয়োগ করতে পারবেন পাশাপাশিঃ সার্টিফিকেট অর্জন করলে ক্যারিয়ারে বাড়তি মূল্য যোগ হবে। সব মিলিয়ে সেই কোর্স ব্যক্তিগত জ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি সমাজ আর দেশের টেকসই উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।বিশ্বব্যাংকের বিনামূল্যের তিনটি কোর্স বাংলাদেশের জন্য কত মূল্যবান হবে?
বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাংকের ফ্রী তিনটি কোর্স বিশেষ কাজে লাগবে যেমনঃ বাংলাদেশ হলো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ যেখানে পরিবেশগত সমস্যা, নদীভাঙ্গন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় আর গরমের তীব্রতা দিন দিন কেবল বেড়েই যাচ্ছে। সেই সব চ্যালেন্জ মোকাবেলায় টেকসই উন্নয়ন আর পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বা কার্যকর নীতি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। বিশ্বব্যাংকের তিনটি বিনামূল্যের অনলাইন কোর্স বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে মূল্যবানঃ কারণ তা পরিবেশ সংরক্ষণ, ব্লু ইকোনমি, গ্রিন টেকনোলজি, নীতি নির্ধারণ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানের জ্ঞান সরবরাহ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আর গবেষকরা তা থেকে গবেষণার নতুন দিক খুঁজে পাবেন। সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তারা নীতি আর উন্নয়ন প্রকল্পে আরো কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবেন। তরুণ উদ্যোক্তারা টেকসই ব্যবসা পরিকল্পনায় নতুন দিকনির্দেশনা পাবেন পাশাপাশিঃ আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেট অর্জনের সুযোগ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখবে। সব দিক মিলিয়ে বলা যায়ঃ দেশের ভবিষ্যত উন্নয়ন আর পরিবেশগত চ্যালেন্জ মোকাবেলায় সেই কোর্স হবে অনন্য হাতিয়ার।
কিভাবে বিশ্বব্যাংকের বিনামূল্যের তিনটি কোর্সে অংশগ্রহণ করতে হবে?
বিশ্বব্যাংকের বিনামূল্যের অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহণ করা খুবই সহজ। প্রথমে আপনাকে যেতে হবে World Bank Open Learning Campus (OLC) অয়েবসাইটে যেখানে সেই কোর্স বিনামূল্যে উন্মুক্ত করা হয়েছে। অয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর একটি ফ্রি অ্যাকাউন্ট খুলে নিজের নাম আর ইমেইল বা প্রয়োজনীয় তথ্য যুক্ত করতে হবে তারপরঃ পছন্দের কোর্স নির্বাচন করে “Enroll Now” বোতামে ক্লিক করলেই আপনি কোর্সের কনটেন্টে প্রবেশ করতে পারবেন। প্রতিটি কোর্সই Self Paced অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে শেষ করার চাপ নেই। আপনি নিজের সুবিধামতো পড়াশোনা করতে পারবেন। কোর্সে লেকচার, কুইজ, কেস স্টাডি, আলোচনার সুযোগ থাকবে যা শেখাকে আরো কার্যকর করে তুলবে। কোর্স সম্পন্ন করার পর চাইলে আপনি সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন যা ভবিষ্যত ক্যারিয়ার কাজে অতিরিক্ত মূল্য যোগ করবে।তবেঃ বিশ্বব্যাংকের বিনামূল্যের অনলাইন কোর্সে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো >>>>>
বিশ্বব্যাংকের বিনামূল্যের অনলাইন কোর্সের সীমাবদ্ধতা হিসেবে কি কি রয়েছে?
বিশ্বব্যাংকের ফ্রী অনলাইন কোর্সের সমস্যা হিসেবে রয়েছে যে বিষয় >>>>> প্রথমতঃ কোর্স কেবলমাত্র ইংরেজি ভাষায় হবার কারণে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ভাষাগত বাধা তৈরি হতে পারে। দ্বিতীয়তঃ অনলাইন কোর্স হবার কারণে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ অপরিহার্য যা গ্রামীণ বা দুর্বল ইন্টারনেট এলাকায় একটি বড় অসুবিধা। তৃতীয়তঃ কোর্সের মূল কনটেন্ট বিনামূল্যে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট পেতে ফি দিতে হয় যা সবার জন্য সহজলভ্য না হতে পারে তাছাড়াঃ অনলাইন ক্লাসে প্রত্যক্ষ শিক্ষক শিক্ষার্থী যোগাযোগের অভাব থাকায় অনেকেই জটিল বিষয় দ্রুত বুঝতে অসুবিধায় পড়তে পারেন। সব মিলিয়ে বলা যায়ঃ সেই সীমাবদ্ধতা থাকলে সচেতনভাবে তা মোকাবিলা করলে সেই কোর্স শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর হবে।