ইসলামী বছরের ক্যালেন্ডারে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত মাসের মধ্যে রজব মাস হচ্ছে অত্যন্ত বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ মাস আর রজব মাস মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন, আত্মশুদ্ধি, রমজানের জন্য মানসিক আর আমলগত প্রস্তুতির জন্য অনন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বলা যায়ঃ রজব মাসকে ঘিরে সমাজে অনেক ভুল রীতিনীতি আর ভিত্তিহীন আমল প্রচলিত রয়েছে যা আমাদের প্রকৃত শিক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তাই কুরআন আর সহিহ হাদিসের আলোকে রজব মাসের প্রকৃত ফজিলত আর রজব মাসের প্রকৃত করণীয় আমল জানা অত্যন্ত বেশি জরুরি।
এই ব্লগে ইসলামের দৃষ্টিতে রজব মাসের গুরুত্ব, এর ফজিলত এবং সঠিক আমল সম্পর্কে সহজ ও প্রামাণ্যভাবে আলোচনা করা হয়েছে, যাতে পাঠক সঠিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারেন।
রজব মাস কী আর কেন মূল্যবান ??????
রজব শব্দের অর্থ হলো সম্মান করা বা মর্যাদা দেওয়া। কুরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা চারটি মাসকে হারাম বা সম্মানিত ঘোষণা করেছেন—
রজব, যিলকদ, যিলহজ ও মুহাররম।
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি… তার মধ্যে চারটি সম্মানিত মাস।”
— (সূরা আত-তাওবা: ৩৬)
রজব, যিলকদ, যিলহজ ও মুহাররম।
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি… তার মধ্যে চারটি সম্মানিত মাস।”
— (সূরা আত-তাওবা: ৩৬)
এই মাসগুলোতে গুনাহের কাজ আরও বেশি মারাত্মক এবং নেক আমলের সওয়াবও অধিক।
রজব হলো ইসলামী হিজরি সনের একটি সম্মানিত মাস, যা আল্লাহ তাআলা নির্ধারিত চারটি হারাম মাসের অন্যতম। এই মাসে গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা এবং নেক আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। রজব মাস মূলত আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যেখানে একজন মুমিন নিজের ভুলগুলো অনুধাবন করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার সুযোগ পান। পাশাপাশি এই মাস রমজানের প্রস্তুতির একটি আদর্শ পর্ব, যেখানে ইবাদতের অভ্যাস গড়ে তোলা সহজ হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে রজব কোনো উৎসবের মাস নয়; বরং এটি সংযম, তওবা, ইস্তিগফার এবং সঠিক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক মূল্যবান সুযোগ।
ইসলামের দৃষ্টিতে রজব মাসের ফজিলত
ইসলামের দৃষ্টিতে রজব মাস একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ সময়। এটি আল্লাহ তাআলা ঘোষিত চারটি হারাম মাসের একটি, যেসব মাসে গুনাহের ভয়াবহতা বেশি এবং নেক আমলের সওয়াবও বৃদ্ধি পায়। কুরআন মাজিদে এসব মাসের সম্মান রক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা রজব মাসের গুরুত্বকে আরও স্পষ্ট করে। এই মাস একজন মুমিনকে আত্মসংযম, তাকওয়া ও নৈতিক শুদ্ধতার পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। রজব মাস মূলত রমজানের প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যেখানে ইবাদতের প্রতি মনোযোগ বাড়ানো সহজ হয়। সালাফে সালেহিনরা এ সময় বেশি বেশি তওবা, ইস্তিগফার ও নেক আমলে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। যদিও রজব মাসকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কোনো বিশেষ ইবাদত নির্ধারিত নয়, তবুও সাধারণ নেক আমল, গুনাহ বর্জন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এই মাস অত্যন্ত মূল্যবান।রজব মাসের করণীয় সকল আমল
রজব মাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো ফরজ ইবাদতগুলো সঠিকভাবে আদায় করা এবং গুনাহ থেকে বিরত থাকা। এ মাসে বেশি বেশি তওবা ও ইস্তিগফার করা উচিত, যাতে অতীতের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা যায়। নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত, জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করা রজব মাসের অন্যতম করণীয়। নফল নামাজ ও সাধারণ নফল রোজা রাখা সওয়াবের কাজ, তবে কোনো নির্দিষ্ট আমলকে সুন্নত মনে করা যাবে না। পাশাপাশি ধৈর্য, সংযম, সত্যবাদিতা ও উত্তম চরিত্র চর্চার মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনে তাকওয়ার বাস্তব অনুশীলন করাই রজব মাসের মূল উদ্দেশ্য।
রজব মাসে যেসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত
❌ রজব মাসের কোনো নির্দিষ্ট তারিখে বিশেষভাবেনামাজ অথবা রোজাকে সুন্নত বা অন্য কিছু মনে করা
❌ শবে মিরাজকে কেন্দ্র করে ভিত্তিহীন আমল করা
❌ বিদআত আর কুসংস্কারমূলক কাজে লিপ্ত থাকা
ইসলামে কোনো আমল গ্রহণযোগ্য হতে হলে তা কিন্তু
❌ শবে মিরাজকে কেন্দ্র করে ভিত্তিহীন আমল করা
❌ বিদআত আর কুসংস্কারমূলক কাজে লিপ্ত থাকা
ইসলামে কোনো আমল গ্রহণযোগ্য হতে হলে তা কিন্তু
অবশ্যই কুরআন আর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে
ইসলামের দৃষ্টিতে শবে মিরাজ আর রজব মাস
শবে মিরাজ ইসলামের ইতিহাসে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয় ঘটনা, যা রাসুলুল্লাহ ﷺ–এর জীবনের মহান মুজিজাসমূহের অন্যতম। এই ঘটনা রজব মাসে সংঘটিত হয়েছে বলে বহু আলেম উল্লেখ করেছেন, তবে নির্দিষ্ট তারিখের ব্যাপারে সহিহ ও চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া যায় না। ইসলামের দৃষ্টিতে শবে মিরাজের শিক্ষা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হলেও এ রাতকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত, নামাজ বা উৎসব পালনের নির্দেশ নেই। তাই রজব মাসে শবে মিরাজ উপলক্ষে বিদআত ও অতিরঞ্জিত আমল থেকে বিরত থাকা জরুরি। বরং মিরাজের মূল শিক্ষা অনুযায়ী নামাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করে নিয়মিত ইবাদতে মনোযোগ দেওয়াই একজন মুমিনের জন্য।রজব মাস কোনো উৎসবের মাস নয়; বরং এটি আত্মশুদ্ধি, গুনাহ বর্জন এবং ইবাদতে ফিরে আসার মাস। এ মাস আমাদের শেখায় কীভাবে ধীরে ধীরে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে রমজানের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হয়। সঠিক আকিদা ও সহিহ আমলের মাধ্যমে রজব মাস কাটাতে পারলেই আমরা আল্লাহর রহমত ও বরকতের অংশীদার হতে পারব। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রজব মাসের যথাযথ সম্মান রক্ষা করে চলার তাওফিক দান করুক আর রজব মাসের সকল রহমত আর বরকত দান করুক 🤲🤲🤲 আমিন